অনলাইন আরবি ভাষা শিক্ষা: একটি ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যাশার পর্যালোচনা

Raozan IT

অনলাইন আরবি ভাষা শিক্ষা: \আরবি ভাষা এই পৃথিবীতে প্রচলিত প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রচলিত মৌলিক ও উপভাষাসহ সব ভাষায় আরবি ভাষার প্রভাব রয়েছে। তেমনিভাবে অন্যান্য ভাষার সাথে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাতেও এই ভাষা বিরাট একটি স্থান দখল করে আছে। আমরা প্রতিদিন পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অসংখ্য আরবি শব্দ ব্যবহার করে থাকি। আরবি আমাদের ধর্মীয় ভাষা, জান্নাতের ভাষা ও রাসূল (সা.)-এর মাতৃভাষা।

রাসূল (সা.) বলেছেন: “তিন কারণে আরবদের ভালবাসিও। কেননা আমি আরবি, কোরআনের ভাষা আরবি এবং জান্নাতীদের ভাষা আরবি”। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের ভাষা আরবি। তাই ইসলাম ও মুসলমানের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হচ্ছে আরবি। মুসলমানদের জীবন-যাপনের উৎসমূল হলো কোরআন, আর তা অবতীর্ণ হয়েছে আরবি ভাষায়। আল্লাহ তাআলা বলেন: “নিশ্চয় আমি এ কুরআনকে আরবি ভাষায় নাযিল করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার”। (সূরা ইউসুফ: আয়াত ০২)।

আরো পড়ুনঃ জালালিয়তের সম্রাট হযরত বাবা ভান্ডারী (ক.)

এই পৃথিবীতে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১৯০ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ছয় ভাগের এক ভাগ। তাদের বেশির ভাগের ভাষা আরবি। বর্তমানে ৫০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলে। পৃথিবীতে সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে আরবির অবস্থান এখন চতুর্থ। পৃথিবীর ২৫টি দেশের সরকারি ভাষা হচ্ছে আরবি। আরব দেশগুলো বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ও খনিজ সম্পদের দেশ হিসাবে পরিচিত। উক্ত দেশগুলোতে কর্মসংস্থানের সন্ধান, ব্যাবসায়িক যোগাযোগ ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আরবি ভাষা শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো বৈদেশিক রেমিট্যান্স। এর ৬৩ শতাংশ আসে আরবি ভাষাভাষী দেশগুলো থেকে। আরব ব্যবসায়ীরা তাঁদের ব্যাবসায়িক কার্যক্রমসহ সব ক্ষেত্রে আরবি ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। বলতে পারি এটি তাঁদের বাণিজ্যিক ভাষা। তাই যাঁরা আরব দেশগুলোতে নিজেদের শ্রম বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন তাঁদের জন্য আরবি ভাষা শেখা খুবই জরুরি।

১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণসভার ২৮তম অধিবেশনে আরবি ভাষাকে এর দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালে ইউনেসকো সেই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস ঘোষণা করে। এর পর থেকে দিনটি ‘আন্তর্জাতিক আরবি ভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ২০২৪ সালে উদযাপিত আরবি ভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারিত হয়েছে ‘আরবি ভাষা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা : সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি উদ্ভাবন বাড়াতে হবে’।

আরোঃ হযরত শাহ্ ছুফি ছদর উদ্দিন আহমদ আশ-শহীদ (রহঃ) জীবনী

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত হয়ে আসছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের আলিয়া মাদ্রাসাগুলো। এখানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কোরআন মাজিদ, হাদিস শরীফ, আকাইদ ও ফিকহ এবং আরবি বিষয়গুলোর পাঠদান হয়ে থাকে। আমরা আরবি ভাষা শিখে থাকি ধর্মীয় স্বার্থে অর্থাৎ নেক আমল করে প্রতিদান পাওয়ার আশায়। কিন্তু আরবি ধর্মীয় ভাষার পাশাপাশি এটি যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম তা ভুলে গেলে চলবে না। অর্থাৎ এই ভাষায় কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করা এবং অন্য কেহ বললে তা শুনে বুঝতে পারা। এটি বিবেচনায় নিয়ে মাদ্রাসাগুলোতে আরবি ভাষা ব্যাপক চর্চার উপর গুরুত্ব দিতেই হবে।

এতে করে শিক্ষার্থীর আরবি ভীতি কমবে অন্যদিকে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়বে যা মাদ্রাসাগুলো টিকিয়ে রাখার অন্যতম উপায় হবে বলে মনে করি। আর এজন্য প্রয়োজন আরবি বিষয়ে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক। যে কোনো ভাষায় যোগাযোগের জন্য ঐ ভাষার চারটি দক্ষতা অর্জন করতে হয়। সেগুলো হলো; শোনা, বলা, পড়া ও লেখা। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় হাজার বছর ধরে গুরুত্বের সাথে আরবি শিক্ষা দান করা হলেও এ ভাষাকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে শিক্ষা দেওয়া হয়নি, এবং ভাষা শিক্ষণের যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। মধ্যযুগে এ উপমহাদেশে আরবি ভাষা ও সাহিত্যকে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করে শিক্ষা দান করা হতো পরবরতিতে উর্দু ভাষা ছিল আরবি সাহিত্য পাঠদানের মাধ্যম।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা সম্প্রসারিত হলেও আরবি ভাষা , সাহিত্য ও ব্যাকরণ বিষয়গুলো শ্রেণিকক্ষে বাংলা ভাষায় বিশ্লেষণ করা হয় এবং শ্রেণিকক্ষে বা মাদ্রাসায় ভাষা হিসেবে আরবি চর্চা ও প্রয়োগের রীতি বা পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাই মাদ্রাসায় ১০/১৫ বছর যাবত আরবি অধ্যয়ন করে শিক্ষার্থীগণ আরবি ভাষায় কুরআন, হাদিস ও ইসলামী শরিয়তের মৌলিক গ্রন্থগুলোর অনুবাদ ব্যখ্যা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হলেও আরবি ভাষায় শোনা ও বলার দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে না।

সাধারণ শিক্ষা ধারার শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বিভাগীয় শহর ও বৃহত্তর জেলাগুলোতে ১৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলেও মাদ্রাসার জন্য বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই), বোর্ড বাজার, গাজীপুর একমাত্র ভরসা যা চাহিদার তুলনায় খুবই নগন্য। কিন্তু খুশির বিষয় হচ্ছে সরকারের মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিগণ তাঁদের আন্তরিকতা দিয়ে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নতি ছাড়া সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয় সম্ভব নয়। তাই তৎকালীন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের মাননীয় সচিব জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান স্যার সর্বপ্রথম স্বপ্ন দেখেন মাদ্রাসা শিক্ষকগণকে অনলাইনে কিভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়?

আর তাঁর এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে তাঁরই ব্যাচমেট জনাব মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান স্যার, (অতিরিক্ত সচিব, অবসরপ্রাপ্ত) এর সাথে বিষয়টি শেয়ার করেন এবং তাঁর সহযোগিতা কামনা করেন। আর জনাব মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান স্যার বিএমটিটিআই এর বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মাহমুদুল হক স্যার (তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক) কে সাথে নিয়ে শুরু করেন মহাপরিকল্পনা। আর তা বাস্তবায়িত হয় জনাব মোঃ কামাল হোসেন স্যার (সাবেক সিনিয়র সচিব), ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ স্যার (সাবেক সচিব) ড. খ ম কবিরুল ইসলাম স্যার বর্তমান সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনাব মোঃ জনাব হাবিবুর রহমান স্যার, (সাবেক মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব) ড. শাহনওয়াজ দিলরুবা খান স্যার, (সাবেক মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব) এবং জনাব মোঃ আব্দুল মান্নান স্যার, বর্তমান মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এর সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন, সহযোগিতা, অনুপ্রেরণা ও অর্থনৈতিক সাপোর্টের কারণে।

২০২১ সালের পহেলা এপ্রিল প্রথম ব্যাচের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় “অনলাইন আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স” এর শুভ উদ্বোধন ও যাত্রা শুরু হয়েছিল। তা দিনে দিনে সংশ্লিষ্ট সকলের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। জনাব মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান স্যার তাঁর অদম্য ইচ্ছা শক্তি, অকৃত্রিম আন্তরিকতা ও নিপুনতার ছোঁয়ায় কোর্স ডিজাইন করে থাকেন যা যুগান্তকারী ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ হিসাবে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের অন্তরে রেখাপাত করতে সক্ষম হয়েছেন। সমগ্র বাংলাদেশের মাদ্রাসার আরবি বিভাগের শিক্ষকগণ এ কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। যা দেশে আরবি ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে একটি স্বরণীয় অধ্যায়। প্রশিক্ষণের স্লোগান, উদ্দেশ্য, স্বপ্ন ও এ তিনটি জিনিষ প্রশিক্ষণকে আরও চমৎকার ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।

আরবি কত সহজে ও অল্প সময়ে আয়ত্ত করা যায় স্যারের অন্যান্য চমকের মধ্যে এটি অন্যতম। প্রশিক্ষণের স্লোগান: আরবি হচ্ছে বিশ্বের সহজতম ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষা, উদ্দেশ্য: ভাষাকে জিহ্বায় রাখা (অর্থাৎ আরবি ভাষাকে অন্তর থেকে বের করে মুখের ভাষায় রূপান্তরিত করা) ও স্বপ্ন: আরবিই হবে শ্রেণিকক্ষের একমাত্র ভাষা। প্রশিক্ষণ কোর্সের কন্টেন্ট : দৈনন্দিন জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি, বাংলাদেশের প্রকৃতি, সমাজ, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, জাতীয় দিবস সমূহ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, ইতিহাস ঐতিহ্য, সস্কৃতি, জাতিসংঘ, সমকালীন আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি। তাছাড়া দাখিল ও আলিম স্তরের পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন বিষয়বস্তুর উপর আরবি ভাষায় পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঠ উপস্থাপন এবং ব্যাকরণের প্রয়োজনীয় মৌলিক বিষয় বিশ্লেষণ। প্রশিক্ষণ পদ্ধতি : সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণার্থী কেন্দ্রিক প্রক্রিয়ায় প্রশিক্ষণ অধিবেশন সমূহ পরিচালনা করা হয়। এতে প্রশিক্ষকগণ প্রশিক্ষণার্থীগণকে উৎসাহিত করেন, কৌতুহলোদ্দীপক পরিবেশ তৈরি করেন এবং অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেন। প্রশিক্ষণার্থীগণ একক উপস্থাপন, প্রশ্নোত্তর, আলোচনা, ভূমিকাভিনয়, বিতর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে আনন্দঘন পরিবেশে আরবি ভাষার ব্যাপক চর্চা করে অভিজ্ঞতার মধ্যমে শিখতে সক্ষম হন। প্রতিটি অধিবেশন উপস্থাপনের জন্য বিষয়বসতু পুর্বেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণার্থীগণ নিজেরাই নির্ধারিত বিষয়বস্তুর উপর সহজ সরল ভাষায় কন্টেন্ট প্রস্তুত করে মৌখিকবাভে উপস্থাপন করেন।

উপস্থাপনের পর প্রশিক্ষক এবং অন্য প্রশিক্ষণার্থীরা উপস্থাপককে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এভাবে প্রতিটি অধিবেশনে আরবি ভাষায় আলোচনা ও তর্ক বিতর্কের এক সতস্ফূর্ত আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মূল্যায়ন পদ্ধতি: অন্যান্য প্রশিক্ষণ কোর্সের ন্যায় এ কোর্সেও প্রাক প্রশিক্ষণ মূল্যায়ন, মধ্যবর্তী মূল্যায়ন এবং প্রশিক্ষণোত্তর মূল্যায়ন পরিচালনা করা হয়। প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে অংশগ্রহণকারীগণ মৌখিক উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রাক মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করে থাকেন। এ মূল্যায়নে দেখা যায় ৯৫% শিক্ষকই আরবি বলতে লজ্জা, ভয় ও সংকোচ বোধ করেন। জড়তার কারণে অধিকাংশ শিক্ষকই আরবিতে সাবলিলভাবে নিজের পরিচয় দিতে পারেন না। ফলে এ মূল্যায়নে অংশগ্রহণকারীগণ গড়ে ২৫%-৩০% নম্বর পেয়ে থাকেন। পরবর্তীতে প্রতি সপ্তাহের শেষে একটি করে মধ্যবর্তী মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এ মূল্যায়নগুলোতে অংশগ্রহণকারীগণ ধারাবাহিকভাবে নিজেদের জড়তা ও দুর্বলতা কে দূর করে দক্ষতার উন্নয়ন করতে সক্ষম হন এবং ৬০%-৮০% নম্বর অর্জন করে থাকেন।

কোর্স শেষে ১০০ নম্বরের চূড়ান্ত মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শ্রবণদক্ষতা, উপস্থাপন, বাচনভঙ্গি, উচ্চারণ, মনোভাব ও শৃংখলা মূল্যায়ন করা হয়। প্রশিক্ষণার্থীগন আন্তরিকতা, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে চূড়ান্ত মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করে ৬০%-১০০% নম্বর পেয়ে কৃতকার্য হন। ৬০% এর কম নম্বর পেলে তাদেরকে অকৃতকার্য ঘোষণা করা হয় এবং পুণরায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অথবা নিজ খরচে পরবর্তী কোর্সে অংশ গ্রহণ করে গ্রেড উন্নয়নের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষক : প্রথম ব্যাচে বিএমটিটিআই এর অনুষদ সদস্যগণ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করলেও পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের আওতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ প্রশিক্ষণ কোর্স সফলভাবে সমাপনকারী দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক মন্ডলী প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ পর্যন্ত প্রায় দুইশতজন মাদ্রাসার শিক্ষক এ কোর্সে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এবং প্রায় তিনশতজন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপালনের জন্য অপেক্ষমান আছেন।

আরবি ভাষাই হবে শ্রেণিকক্ষের একমাত্র ভাষা এই স্বপ্নকে ধারণ করে সারা বাংলাদেশের একঝাঁক চৌকষ প্রশিক্ষককে নিয়ে এই কাফেলার যাত্রা শুরু। যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন আরবি ভাষার অতীত গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে। যাঁরা সরকারের এ মহান উদ্যোগকে বাস্তবায়নকল্পে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে চলেছেন করোনা মহামারী থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত। আমিও তাঁদের একজন সহযোদ্ধা হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। ইতিমধ্যে ১৫১টি ব্যাচে প্রায় ৫০৮৫ জন শিক্ষক এই প্রশিক্ষণের আওতায় এসেছেন এবং ১৫২-১৬১তম ব্যাচগুলোতে তিনশতজনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আলোচিত এই প্রশিক্ষণ কোর্সকে কেন্দ্র করে আমার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি সেই সমস্ত প্রশিক্ষণার্থী সহকর্মীদের প্রতি যাঁরা ইতিমধ্যেই কোর্স সমাপ্ত করেছেন, তাঁরা যেন কোর্সের অর্জিত জ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতরণ তথা শিক্ষার্থীদের উপকারে আসে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবেই সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে। এই কোর্স আগামীতে চলমান থাকবে এটিই আমাদের কামনা। আরবি ভাষাকে নিয়ে আমার অনেক আবেগ ও প্রত্যাশাগুলোর মধ্যে হচ্ছে উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে “অ্যারাবিক অ্যাম্বাসেডর টীম” গঠন করা যার নেতৃত্বে থাকবে বিএমটিটিআই। বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আরবি ভাষা চর্চার সুযোগ ও পরিবেশ তৈরি করা। শ্রেণি কক্ষে মূল বই পড়ানো। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা। কাংখিত পাঠদান নিশ্চিত করা। প্রতিটি মাদ্রাসায় অন্যান্য ক্লাবের মতো অ্যারাবিক ল্যাংগুয়েজ ক্লাব খোলা। শিক্ষার্থীরা যেন শুনা, বলা, পড়া ও লেখা দক্ষতায় সমানভাবে এগিয়ে যেতে পারে সেটি নিশ্চিত করা।

শিক্ষার্থীদের আরবিভীতি কমানো, যাতে তারা আরবিকে বোঝা মনে না করে মজায় মজায় শেখে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে শুধু বাংলা ও ইংরেজিতে দক্ষ হলেই চলবে না বরং তাকে আরবিতেও দক্ষ হতে হবে। এ ভাষায় কথোপকথন ও যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। একজন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী যদি ইংরেজিতে কথোপকথন ও যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখে তাহলে একজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী কেন আরবিতে কথোপকথন ও যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে না?! আমার মনে হয় এটি এখন সংশ্লিষ্ট সকলের ভাবার সময় এসেছে।

লিখেছেনঃ
আব্দুল আলীম
সহকারি অধ্যাপক (আরবি), পাতাড়ী ফাযিল মাদ্রাসা, সাপাহার, নওগাঁ, রাজশাহী
সহকারি সমন্বয়ক ও প্রশিক্ষক, অনলাইন আরবি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স, বিএমটিটিআই, গাজীপুর।

AL Sheraz