অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও থেমে নেই কাউন্সিলর জাহাঙ্গীরের চাঁদাবাজি

Raozan IT

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও থেমে নেই সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনর রশীদ কিরন এমপির ক্যাডার হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমের চাঁদাবাজি ও দখলবাজি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি করলে বিএনপিতে জায়গা হবে না। জনসভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য এসব কথা বললেও সোনাইমুড়ী উপজেলায় বরকত উল্লাহ বুলুর ছত্রছায়ায় কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর ২০২৪) রাত আনুমানিক ১০ টার সময় কাউন্সিলর জাহাগীর আলম তার দলবল নিয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাইমুড়ী পৌরসভার সোনাইমুড়ী বাজারের চড়ুইভাতি রেস্টুরেন্টে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে রেস্টুরেন্টটিতে ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং রেস্টুরেন্ট এর মালিক আবুল কাশেম এর ছোটভাই শহীদুল ইসলামকে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করেছে। তাৎক্ষণিক ভাবে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ  প্লাস্টিক দূষণ জনস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে: চুয়েট ভিসি

এঘটনায় হামলার শিকার হওয়া রেস্টুরেন্টের পরিচালক শহীদুল ইসলাম বেগমগঞ্জ উপজেলার এখলাসপুর ইউপির ৩নং ওয়ার্ড এলাকার হাসেম মিয়ার বাড়ির আবুল হাসেমের ছেলে। এই ঘটনায় রেস্টুরেন্ট এর মালিক আবুল কাশেম এর পিতা আবুল হাসেম মিয়া বাদী হয়ে সোনাইমুড়ী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, চড়ুইভাতি রেস্টুরেন্টে ভাংচুর ও মালিকের ছোটভাই শহীদুল ইসলামের উপর হামলার ঘটনায় তাঁদের পিতা আবুল হাসেম মিয়া বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা এই বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে চড়ুইভাতি রেস্টুরেন্টের মালিক আবুল কাশেমও তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী আমরা তাঁকেও খুঁজছি।

চড়ুইভাতি রেস্টুরেন্টের পরিচালক শহীদুল ইসলাম প্রতিবেদকে বলেন, গত ২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন ২ লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়ে যায়। আবারও ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করলে আমি অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁরা রেস্টুরেন্টে ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং আমাকে বেধড়ক মারধর করে। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ২০২১ সালে চাঁদা না পেয়ে আমার বড়ভাই আবুল কাশেমকেও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছিল তাঁরা।

তখন আমার বড়ভাই বাধ্য হয়ে রেস্টুরেন্টের দায়িত্ব আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে সিঙ্গাপুরে চলে যান। এরপর ২০২৩ আমার বড়ভাই আবুল কাশেম দেশে আসলে আরেক দফা হামলা চালায় কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন। এসব হামলা মামলা সহ্য করতে না পেরে আমার বড়ভাই আবুল কাশেম পালিয়ে গিয়ে কানাডায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এরপরেও রেহাই মিলেনি ২০২৩ সালে মিথ্যা মামলার আসামী করা হয়েছে তাঁকে। এত কিছুর পরও তাদের হাত থেকে রেহাই মিলছেনা কিছুদিন পরপর তাঁরা মোটা অংকের চাঁদা দাবী করছে, চাঁদা না দিলে ভাংচুর ও মারধর করছে।

চড়ুইভাতি রেস্টুরেন্টের মালিক কানাডা প্রবাসী আবুল কাশেম হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিবেদকে বলেন, সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনর রশীদ কিরন এমপির ক্যাডার হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমের হামলা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়ে আমি দেশ থেকে পালিয়ে কানাডায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। এরপরও রেহাই পাইনি আমি কানাডায় থাকাকালীন সময়ে আমাকে মিথ্যা ও সাজানো তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলার আসামী করা হয়েছে। ভেবেছিলাম স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসী ও ক্যাডারদের হাত থেকে নিস্তার মিলবে।

কিন্তু আমাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর ছত্রছায়ায় সোনাইমুড়ী উপজেলায় এখনো চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম। ২০২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আমার রেস্টুরেন্ট থেকে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়ে যায় কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন। এরপর গত (১০ ডিসেম্বর ২০২৪) রাতে কাউন্সিলর জাহাগীর আলম তার দলবল নিয়ে আমার ভাইয়ের কাছে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাঁরা রেস্টুরেন্টে ভাংচুর চালায় এবং আমার ভাইকে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। জানিনা কখন ওদের হাত থেকে নিস্তার মিলবে? আমি এই বিষয়ে উপদেষ্টাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

AL Sheraz