ফতেনগর নোয়াজিষপুর অদুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, গহিরা অদুদিয়া সড়কের একক নির্মাতা, উত্তর চট্টগ্রামের মহান দানবীর জনাব সৈয়দ মুহাম্মদ আব্দুল অদুদ চৌধুরীর ৫৪ তম মৃত্যু বার্ষিকী সোমবার।
তিনি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১৯০৭ মতান্তরে ১৯০৮ সালে নোয়াজিষপুর গ্রামে ওয়ালী চৌধুরী বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পরিচিতি মরহুম আব্দুল অদুদ চৌধুরী পিতার নাম হাজী ছৈয়দ আহম্মদ চৌধুরী, দাদার নাম আব্দুল কাদের চৌধুরী, মাতার নাম ওমদা খাতুন তিনি ফোরক চৌধুরীর বড় বোন ছিলেন। ফোরক চৌধুরী ছিলেন একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি।
ব্যবসায়কি সফলতা, তৎকালীন সময়ে আব্দুল অদুদ চৌধুরী রেঙ্গুন চলে যান, রেঙ্গুন গিয়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন এবং অতি অল্পসময়ের মধ্যেই তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি রেঙ্গুন ত্যাগ করে কলকাতায় গিয়ে ব্যব্যবসা শুরু করেন, সেখানেও তিনি ব্যবসায় সফলতা লাভ করেন, কিন্ত যখন ১৯৪৭ যখন কলকাতায় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয় তখন নিজেকে নিরাপদ মনে না করায় তিনি কলকাতা ছেড়ে নিজের জন্মস্থান চট্টগ্রাম চলে আসেন এবং চাক্তাই এসে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন।ব্যবসায়িক সফলতার কারণে তিনি প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হন।
আরো পড়ুনঃ হযরত শাহ্ ছুফি ছদর উদ্দিন আহমদ আশ-শহীদ (রহঃ) জীবনী
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ আব্দুল অদুদ চৌধুরী ফোরক চৌধুরীর কন্যা আমাতুল নুরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা মরহুম আব্দুল অদুদ চৌধুরী ব্যবসার পাশাপাশি প্রথমে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগী হন, তাই তিনি যেখানেই ব্যবসা করেছিলেন সেখানেই তিনি একটি করে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে নোয়াজিষপুর এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা কম ছিল, হাতে গুনা কয়েকটা প্রাইমারি স্কুল ছিল, হাই স্কুল তো ছিলই না। নোয়াজিষপুরের জন সাধারণ শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার জন্য অত্র এলাকায় একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সে লক্ষ্যে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জন সাধারণের মতবিনিময় ও জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সভা সমাবেশ শুরু করেন।
স্হানীয় কিছু শিক্ষানুরাগী ও সনামধন্য ব্যক্তিবর্গ আব্দুল অদুদ চৌধুরীর স্মরণাপন্ন হয়ে এলাকায় একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন।উপস্থিত সবার সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে জনাব চৌধুরী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। অদুদ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো হচ্ছেঃ
এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, রাউজান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সহ অসংখ্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন। রাস্তাঘাট নির্মাণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় কোনো গাড়ি চলাচল করতনা। এলাকার লোকজন নৌকা যোগে অথবা পায়ে হেঁটে চলাচল করত। জনসাধারণের কষ্টের কথা বিবেচনায় এনে তিনি নিজের অর্থায়নে জমিন কিনে সবার যাতায়াতের সুবিধার্থে গহিরা অদুদিয়া সড়ক নির্মাণ শুরু করেন ।গহিরা হতে মোহাম্মদ তকির হাট ,আজাদী বাজার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন , পরবর্তীতে এ সড়কটি নানুপুর হয়ে হেঁয়াকো বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় যাতায়াত করার একমাত্র মাধ্যম হয়ে যান।
আমার জানামতে মরহুম আব্দুল অদুদ চৌধুরী এর কোনো সন্তান ছিলেন না ।তাঁহার দুই পালক পুত্র ও এক কন্যা সন্তান রয়েছেন । তাঁরা হলেন জনাব হাবিবুল ইসলাম চৌধুরী ও জনাব নজরুল ইসলাম চৌধুরী ।তবে এলাকার মানুষের কাছে তাঁহারা মানিক ও বাদল নামে পরিচিত ।কন্যা সবার কাছে বিবি নামে পরিচিত , যার শ্বশুর বাড়ি হাটহাজারী।
আমি জানি মরহুম আব্দুল অদুদ চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য,তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে আজ অগনিত শিক্ষার্থীরাই তাঁর সন্তান সমতুল্য । তাই মরহুমের অবদানের স্মৃতি স্বরুপ প্রতি বছর ২৪ শে নভেম্বর তাঁহার মৃত্যু বার্ষিকী পালনের মাধ্যমে তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি ।যেহেতু আমি নিজেও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ফতেনগর নোয়াজিষপুর অদুদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৯ ব্যাচের একজন ছাত্র । তাই প্রতিবছর এই মহান মনীষীর প্রতি দানবীয় আব্দুল অদুদ চৌধুরীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। মৃত্যু- ১৯৭১ সালের ২৪ শে নভেম্বর উত্তর চট্টগ্রামের এই মহান দানবীর মরহুম আব্দুল অদুদ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।
তবে তার জনহিতকর কাজের মাধ্যমে তিনি আমাদের সকলের হৃদয়ের মাঝে আমৃত্যু হয়ে আছেন চির অম্লান হয়ে আছেন। তাই আমরা নোয়াজিষপুরবাসী ওনার কাছে কৃতজ্ঞ। বর্তমানে তিনি গহিরা অদুদিয়া সড়কের পূর্ব পাশে মদুন চৌধুরী ঘাটায় তার পবিত্র কবর শরীফে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।আল্লাহ ওনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
লেখকঃ শাহাদাত হোসেন পলাশ

প্রধান সম্পাদকঃ মীর আসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশকঃ কামরুল ইসলাম বাবু, নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ ওসমান গনি