
বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি বর্তমানে ‘মৃত্যুর করিডোর’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। চলতি বছরের গত ১০ মাসে এই ১৫০ কিলোমিটার পথে ১৫৫টি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫০ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৫১ জন। এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে অপ্রশস্ত সড়ক, বিপজ্জনক বাঁক এবং অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্যকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, পরিবহন সংস্থা ও স্থানীয়দের মতে, এই মহাসড়কে লাগামহীন প্রাণহানির জন্য বহুবিধ কারণ দায়ী:
অপ্রশস্ত সড়ক ও সড়ক বিভাজকের অভাব: ধারণক্ষমতার তুলনায় সড়ক অনেক ছোট এবং কোনো সড়ক বিভাজক (Road Divider) না থাকায় সামান্য অসাবধানতায় মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটছে।
বিপজ্জনক বাঁক: সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এই পথে অত্যন্ত বেশি সংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।
লবণাক্ততার কারণে পিচ্ছিল সড়ক: লবণবাহী ট্রাক থেকে পানি ঝরে সড়ককে পিচ্ছিল করে তোলে, যা বৃষ্টি বা কুয়াশার সময় দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
বেপরোয়া গতি ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা: অদক্ষ চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং বেপরোয়া গতি একটি বড় কারণ।
অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন: ফিটনেসবিহীন যান ও নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা অবাধে চলাচল করে, যা দুর্ঘটনা বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আরো খবরঃ চট্টগ্রাম অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের অশনি সংকেত
খুটাখালী, ডুলহাজারা ও চকরিয়ার স্থানীয় বাসিন্দারা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, তারা জীবন হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হন।
ডুলহাজারা এলাকার বাসিন্দা ইয়াছিন আরাফাত তিন চাকার যানবাহনের আধিক্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেনঃ
"এই মহাসড়কে যে পরিমাণ তিন চাকার গাড়ি রয়েছে, তা বাংলাদেশের আর কোনো মহাসড়কে আছে কিনা সন্দেহ। প্রশাসন এগুলো দূর করতে পারছে না।"
বাস চালক রহিম উদ্দিনও রাস্তা ছোট হওয়া, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তিন চাকার গাড়ির দৌরাত্ম্যকে দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
হাইওয়ে পুলিশ: মালুমঘাট হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক জিয়া উদ্দিন জানান, বেপরোয়া গতি একটি প্রধান কারণ। হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে এবং গতিসীমা ৭০-৮০ এর বেশি হলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ তিন চাকার গাড়ির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বিআরটিএ’র মত: কক্সবাজারস্থ বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান মনে করেন, পর্যটন নগরী হওয়ার কারণে যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। তিনি বলেন, এই মহাসড়কটি চার লেন বা ছয় লেনে উন্নীত করা ছাড়া দুর্ঘটনা কমানোর বিকল্প নেই।
আরো নিউজঃ ভূমিকম্পে মেট্রোরেলের দেয়াল ও ফ্লোরে ফাটল
মহাসড়কটিকে ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে স্থানীয় জনগণের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেন উন্নীতকরণ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক সুনীল বড়ুয়া দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ৬ লেনে উন্নীতকরণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে এবং ফাইনাল রিপোর্টের অপেক্ষায় আছে কর্তৃপক্ষ। রিপোর্ট পাওয়ার পরই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রধান সম্পাদকঃ মীর আসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশকঃ কামরুল ইসলাম বাবু, নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ ওসমান গনি