
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া কাঁচাবাজার এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী মর্জিনা বেগম (৫৩) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তিন দুর্বৃত্ত তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। বুধবার দুপুরে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মো. শহিদুল ইসলাম (৪৩), হবিগঞ্জ জেলার রাণীগঞ্জের হোসেন ওরফে শফিক (৪০) এবং একই জেলার গয়েরপুরের মো. রুমান মিয়া (২৪)। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনই আখাউড়া পৌর এলাকার মসজিদপাড়ার লাল মিয়া হাজীর বাড়ির ভাড়াটিয়া।
আরো পড়ুনঃ বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে নৌ-দুর্ঘটনা: চালকের মৃত্যু
নিহত মর্জিনা বেগম আখাউড়া পৌর এলাকার দেবগ্রাম গ্রামের ইসমাইল মিয়ার স্ত্রী ছিলেন। তিনি সড়ক বাজারে শ্রমিক ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেন এবং সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দৃষ্টিহীন স্বামীকে নিয়ে তিনি নয়াবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
নিহতের মেয়ে রহিমা আক্তারের দায়ের করা মামলার এজাহার এবং পিবিআই এর তদন্ত সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে মর্জিনা বেগমকে ফোন করে ডেকে নেওয়া হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওইদিন বিকেল ৫টার দিকে আখাউড়া পৌরসভা কার্যালয়ের পুরোনো টিনের চালা দেওয়া ভবনের পাশে তার মরদেহ পাওয়া যায়। রহিমা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, তার মায়ের গলায় চাপ দেওয়ার কালো দাগ এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ময়লা রয়েছে। লাশের পাশেই একজোড়া পুরুষের জুতাও পড়েছিল।
আরো দেখুনঃ মধ্যরাতে বঙ্গোপসাগরে ভূমিকম্প, কেঁপে উঠল টেকনাফ
পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শচীন চাকমা বুধবার এই হত্যা রহস্য উদঘাটনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পিবিআই এই মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং ২৬ নভেম্বর মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে এসআই মো. আল-আমিনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
পিবিআইয়ের তদন্তে বের হয়ে আসে, কাঁচাবাজারের দারোয়ান মো. শহিদুল ইসলাম ওইদিন রাত ৩টা ৪ মিনিটের দিকে নিজের মোবাইল নম্বর থেকে মর্জিনাকে ফোন করে মালের গাড়ি আসার কথা বলে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে আসেন। কাঁচাবাজারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, শহিদুলের ফোন করার মাত্র ১৪ মিনিট পর রাত ৩টা ১৮ মিনিটে মর্জিনাকে কাঁচাবাজার হয়ে ঘটনাস্থলের দিকে যেতে দেখা যায়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থলে আসার পর শহিদুল প্রথমে মর্জিনাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এরপর হোসেন ওরফে শফিক ও মো. রুমান মিয়া তাকে ধর্ষণ করতে চাইলে মর্জিনা তীব্র প্রতিরোধ গড়েন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শফিক ও রুমান মিয়া তাকে হাত-পা বেঁধে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। মর্জিনার প্রতিরোধের মুখে এই তিন দুর্বৃত্ত তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।
আরো খবরঃ রাউজানে ৬০ লিটার চোলাই মদ ও সিএনজি উদ্ধার: ২ জন গ্রেপ্তার
হত্যাকাণ্ডের প্রক্রিয়া সম্পর্কে পিবিআই জানায়, শফিক সজোরে মর্জিনার গলা চেপে ধরেন, শহিদুল ইসলাম দুই হাতে গলা ধরেন এবং রুমান মিয়া দুই পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকেন। সম্মিলিতভাবে মর্জিনা বেগমকে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তারা মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায়।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা এবং গুপ্তচরের তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বুধবার দুপুরে পিবিআই প্রথমে শহিদুল ইসলামকে আখাউড়া পৌরসভার সড়কবাজারস্থ কাঁচাবাজার সবজি দোকানের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার পর শহিদুল মোবাইল ফোন হারানোর নাটক সাজালেও, পিবিআইয়ের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে ধরা পড়ে যে তিনি একই হ্যান্ডসেট সিম পরিবর্তন করে ব্যবহার করছিলেন।
শহিদুল ইসলামের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে হোসেন ওরফে শফিক (৪০) এবং মো. রুমান মিয়াকে (২৪) আখাউড়া মসজিদপাড়াস্থ লাল মিয়া হাজীর ভাড়া ঘর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টর মো. আল-আমিন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং স্বেচ্ছায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তাদের বিধি মোতাবেক আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রধান সম্পাদকঃ মীর আসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশকঃ কামরুল ইসলাম বাবু, নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ ওসমান গনি