রাউজান নিউজ প্রতিবেদন ঃ
রাউজানের প্রায় প্রতিটি পাকা আধাপাকা রাস্তা ঢাকা পড়েছে এক থেকে দেড় ইঞ্চি করে মাটির আস্তরে। এই মাটি বৃষ্টির পানিতে পিচ্ছিল হয়ে পড়া যানবাহন চলতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।
এলাকার জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা যায় খাল, পাহাড়,কৃষি জমি থেকে কেটে নেয় মাটি ড্রাম ট্রাকে পরিবহনের সময় মাটি পড়ে পথঘাটের এমন অবস্থা হয়েছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি কার্পেটিং রাস্তায় এখন এক দেড় ইঞ্চি করে মাটির আস্তরে ঢাকা। এসব রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনের চাকায় কাদা মাটি আগে দমবন্ধ হওয়া ধুলায় আচ্ছন্ন থাকলেও এখন সব রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।
খবর নিয়ে জানা যায়,গত প্রায় দেড় দশ ধরে এই উপজেলার কৃষি জমি ও ডোবা জলাশয় ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ করতে দেয়া হয়নি। ওই সময় পাহাড় ও কৃষি জমির কাটার বিরুদ্ধে কড়াকড়ি ছিল। আওয়ামী সরকারের পতন হলে এলাকার মানুষ যার যেমন ইচ্ছে সেখানে জমি ও জলাশয় ভরাট করছে। যেখানে সেখানে নির্মাণ করছে নানা অবকাঠামো।
একারণে প্রচুর চাহিদা রয়েছে বালু ও মাটির। মাটির চাহিদা পূরণ করতে অনেকেই পাহাড় ,কৃষি জমি ছাড়াও খালে বাঁধ নিয়ে মাটি উঠিয়ে ব্যবসা করছে। কৃষি মৌসুমে খালের বাঁধ দিয়ে আবার পাহাড়,টিলা, কৃষি জমি থেকে স্কেলেভেটরে মাটি উঠিয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ী মাটি বালু সরবরাহ দিচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেছেন গত পাঁচ আগস্টের পর এলাকা ভিত্তিক মাটি ও বালু বিক্রির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এসব সিন্ডিকেট সহজ ভাবে মাটি পাওয়ার উৎস করে নিয়েছে, খাল, পাহাড় ও কৃষিজমিকে। এসব উৎস থেকে মাটি সরবরাহ দিতে রাতদিন নির্বিচারে কাটছে পাহাড়,টিলাসহ কৃষিজমি। মাটি কেটে রাতদিন শত শত ট্রাকে এসব মাটি সরবরাহ দিচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় ভরাট কাজে। প্রতিদিনের এমন দৃশ্য এই উপজেলার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে।
খবর নিয়ে জানা যায়, মাটি কাটা ও সরবরাহের ব্যবসা নিয়ে রয়েছে সিন্ডিকেট সমূহের নিজেদের মধ্যে রয়েছে দলাদলি। এই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায় সময় হচ্ছে দল উপদলের মধ্যে সংঘর্ষ,সংঘাত। গোলাগুলি ও মারামারিতে মরছে কেউ কেউ।
স্থানীয় জনসাধারণ ও থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায় পাহাড় ও কৃষিজমি কেটে থেকে মাটি কাটা ও সরবরাহ নিয়ে পক্ষ বিপক্ষে সংঘাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাঁচ আগস্টের পর থেকে অন্তত ২০ দফায় গুলিগোলার ঘটনা ঘটেছে, এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ মারধরের শিকার হয়ে আহত হয়েছে অন্তত সাতজন। মারা গেছে দুজন।
স্থানীয় জনসাধারণ সূত্রে জানা যায় রাউজানের কদলপুর ও রাউজান সদর ইউনিয়নের পুর্বাংশে রয়েছে সারি সারি পাহাড় টিলা। সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত এসব পাহাড় টিলার মাটি এখন মাটি খেকোদের আয়ের উৎস। জানা যায় গত কয়েক মাসে রাউজান পৌরসভার নয় নস্বার ওয়ার্ড ও কদলপুরের কয়েকশ একর পাহাড়,টিলাভুমি নির্বিচাওে কেটে সমতল করে ফেলা হয়েছে। পার্বত্য জেলা ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সীমানা সাথে যুক্ত এই এলাকার সারি সারি পাহাড় টিলা ভুমির মালিক বয়নশিল্প উন্নয়ন সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকার। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেও তখনকালীন ক্ষমতাশীন দলের লোকজন পৌর সভার নয় নম্বর ওয়ার্ডে ও ডাবুয়া ইউনিয়নে বিশাল এলাকা জুড়ে থাকা শত শত একর পাহাড় টিলা কেটে ইটভাটা সৃষ্টি করে পাহাড়ী ও কৃষি জমির মাটি ব্যবহার করেছে। আগে আওয়ামীলীগের লোকজনের হাতে মাটি বালুব্যবসার নিয়ন্ত্রন থাকলেও এখন ওই জায়গা দখল করে নিয়েছে বিএনপি’র সাইন বোর্ডে আড়ালে থাকা কতিপয় নেতাকর্মী।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সহকারি কমিশনার ভুমি অংছিং মারমা বলেন তিনি নিজের দপ্তরের কাজের পাশাপাশি পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। এসব কাজ করে যতদুর সম্ভব জমি ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযানও চালাচ্ছেন। বিভিন্ন সময় অভিযানে মাটিবাহী ট্রাক,স্কেলেভেটর জব্দসহ জড়িতদের অর্থদন্ড দিচ্ছে।
প্রধান সম্পাদকঃ মীর আসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশকঃ কামরুল ইসলাম বাবু, নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ ওসমান গনি