মীর আসলাম (রাউজান নিউজ):
রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে বিবাদমান বিএনপি’র অন্তকোন্দেলে সৃষ্ট গোলাগুলি ও খুনের ধারাবাহিকতায় এই উপজেলায় খুনের তালিকায় যোগ হয়েছে আরো একজনের নাম। শনিবার ২৫ অক্টোবর খুন হয় পৌরসভার নয় নম্বার ওয়ার্ডের যুবদল কর্মী আলমগীর প্রকাশ আলম। তিনি বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারি বলে জানা যায়।
এর আগে ৭ অক্টোবর দিন দুপুরে মদুনাঘাটে গাড়ি আটকিয়ে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা এলোপাতারি গুলি চালিয়ে খুন করেছিল রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের বিএনপি কর্মী ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমকে। হাকিম সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী বলে জানাযায়। ধারাবাহিক খুনের ঘটনার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের দাবি রাউজানের ১৭ খুনের মধ্যে সব খুনের ঘটনা রাজনৈতিক হত্যাকান্ড নয়। ১৭টির মধ্যে আটটি খুন রাজনৈতিক কারণে হতে পারে।
এদিকে এই হত্যাকান্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি’র (চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য গোলাম আকবর খোন্দাকার সমর্থিত) উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী। দলের পক্ষে দেয়া এই বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন নিহত আলম পৌরসভার নয় নাম্বার ওয়ার্ডের যুবদলের নেতা। তাদের দাবি নিহত আলম আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছর কারাভোগের কারামুক্ত হয়ে বাড়িতে ছিলেন। বিৃতিতে অবিলম্বে এ হত্যাকান্ডে সঙ্গে জড়িত ও খুনের নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
স্থানীয় জনসাধারণ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায় শনিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে আলম তার বাড়ির অদুরের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিল পরিবার নিয়ে। ফিরে আসার পথে অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারীরা তাকে গুলি করে খুন করে ঘটনাস্থল রাউজান পৌরসভার নয় নাম্বার ওয়ার্ডের রশিদাপাড়া সড়কের ভিতর। স্থানীয়রা বলেছেন বাড়িতে ফিরার পথে তিনি অপর এক যুবকসহ মোটরসাইকেলে ছিলেন। পিছনে ছিলেন একটি অটোরিক্সায় তার স্ত্রী। সূত্র মতে সন্ত্রাসীরা তাকে পর পর কয়েকটি গুলি করে তলপেটের নিচে ও বুকে। ওই এলাকার কয়েকজন বলেছেন এই ঘটনায় রিয়াদ নামের আরো এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তবে কেউ তার বিস্তারিত পরিচয় ও অবস্থান জানাতে পারেনি। এই ঘটনায় নিহত আলম পূর্ব রাউজানের ছিদ্দিক চৌধুরীর বাড়ির আব্দুর সাত্তারের ছেলে।
স্থানীয় জনসাধারণ সূত্র সমূহ থেকে জানা যায় হত্যাকারীরা ওই দিন আগে থেকে আলমের গতিবিধি অনুসরণ করে আসছিল সোর্সের মাধ্যমে। ওৎ পেতে বসেছিল রশিদাপাড়ার রাস্তার পাশে একটি মসজিদের কাছে ঝোপের ভিতর। আলম এই পথে ঝোপের কাছাকাছি আসামাত্র ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে গুলিতে খুন করে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় গত বছর পাঁচ আগস্টে রাজনৈতিক পেক্ষাপট পরিবর্তনের পর আলম দলবল নিয়ে বিএনপি’র সাইন বোর্ডের আড়ালে এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রনে রেখে চাঁদাবাজী, ডাকাতি, বালু মাটির ব্যবসার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে তৎপরতার মাঝে বিরোধে জড়ায় প্রতিপক্ষ অপর একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে।
এই অবস্থায় এলাকার আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় থাকা দুই পক্ষের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্কে জড়ায়। এই বিরোধের ধারাবাহিকতায় পূর্ব রাউজান ও কদলপুরের ঘটে বহুবার গোলাগুলি, সংঘর্ষ সংঘাতে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটে । জানা যায় আলম পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অস্ত্রসহ ধরা পড়েছিল আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। ছিলেন জেলে।
খুনের ঘটনা নিয়ে জানতে বার বার ফোন করলেও রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ফোন রিসিভ করেননি। তবে থানা সূত্রে জানা যায় আলমের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত আলমের নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
প্রধান সম্পাদকঃ মীর আসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশকঃ কামরুল ইসলাম বাবু, নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ ওসমান গনি