
রাউজানে অবৈধ মাটি-বালু উত্তোলন অব্যাহতঃ চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় কৃষিজমি, পাহাড়ি টিলা এবং বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন (Illegal soil and sand extraction) কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। প্রশাসনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং বারবার অভিযান পরিচালনার পরও এক শ্রেণির অসাধু চক্র নির্বিচারে পরিবেশ বিধ্বংসী এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এই অবৈধ কার্যক্রমের ফলস্বরূপ এলাকার পরিবেশ যেমন মারাত্মক হুমকির মুখে, তেমনি আইনশৃঙ্খলার অবনতিও ঘটছে। সম্প্রতি, এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে রাউজান উপজেলা প্রশাসন আবারও কঠোর অবস্থানে থেকে অভিযান পরিচালনা করেছে। সর্বশেষ এই অভিযানে তিনটি ট্রাক আটক করা হয় এবং এর সঙ্গে জড়িত তিন চালককে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত রবিবার সন্ধ্যায় রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আইলীখীল হলদিয়া বিল এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড়ি টিলা কাটার সময় একটি তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো হয়।
| বিষয় | বিস্তারিত তথ্য |
|---|---|
| অভিযান পরিচালনা | রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিসান বিন মাজেদ-এর নেতৃত্বে। |
| আটক ও ব্যবস্থা | অবৈধ মাটি বহনকারী ৩টি ট্রাক আটক এবং চালকদের জরিমানা করা হয়। |
| দণ্ডিত চালকগণ |
|
| মোট জরিমানা | সর্বমোট ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। |
দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় মাটি ও বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
-
অভিযোগের মূল লক্ষ্য: স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, রফিক সওদাগরের নেতৃত্বে এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন ও পাহাড়ি মাটি কাটার কাজ চলছে।
-
রফিক সওদাগরের অস্বীকার: অভিযুক্ত রফিক সওদাগর অবশ্য এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, “আমি মাটি কাটাচ্ছি না। মূলত ইটভাটার মালিকরাই মাটি কাটছে।”
অবৈধ মাটি ও বালু উত্তোলনের অভিযোগ কেবল আইলীখীল হলদিয়া বিল এলাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কদলপুর ইউনিয়নের বড়ুয়া জয়নগর এলাকাতেও নির্বিচারে সরকারি টিলাভূমি কেটে নেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
রাউজানে অবৈধ মাটি ও বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং প্রশাসনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ তাঁর দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেন।
রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ বলেন: “রাউজানে পাহাড় ও মাটি কাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন এখন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি এলাকায় সংঘটিত কয়েকটি হত্যাকাণ্ড বালু ও মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই কেবল পরিবেশ রক্ষায় নয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেও এই অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে।”
ইউএনও-এর বক্তব্য অনুযায়ী, এই অবৈধ কর্মকাণ্ড কেবল পরিবেশগত সমস্যা নয়, বরং এটি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির একটি অন্যতম কারণ, যার ফলে হত্যাকাণ্ডসহ গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
অবৈধ উত্তোলনের প্রভাব ও প্রশাসনিক পদক্ষেপের তুলনামূলক চিত্রঃ
| বৈশিষ্ট্য | অবৈধ উত্তোলনের প্রভাব | প্রশাসনের পদক্ষেপ |
|---|---|---|
| পরিবেশগত ঝুঁকি | পাহাড়ি টিলা ধ্বংস, কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস এবং ভূমিধসের আশঙ্কা বৃদ্ধি। | নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও তাৎক্ষণিক জরিমানা। |
| আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি | বালু ও মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে বিরোধ সৃষ্টি এবং হত্যাকাণ্ডসহ গুরুতর অপরাধের জন্ম। | আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অভিযান জোরদার করা। |
| অর্থনৈতিক ক্ষতি | রাষ্ট্রীয় সম্পদ (টিলাভূমি, বালুমহাল) অবৈধভাবে লুট। | জড়িতদের বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানা ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। |

