মীর আসলাম (রাউজান নিউজ) :
রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের বিএনপি কর্মী ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমের খুনের সাথে জড়িত খুনিদের স্বীকারোক্তি অনুসরণ করে রাউজানের নোয়াপাড়ায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পরিচালিত এক অভিযানে থানা থেকে লুন্ঠিত চাইনিজ রাইফেলসহ বিপুল সংখ্যক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।
গত ৯ নভেম্বর রোববার গভীর রাত থেকে পুলিশের এই অভিযান চলে দক্ষিণ রাউজানের সন্ত্রাস প্রবণ এলাকা নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরী হাটের পাশে থাকা আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়িতে ১০ নভেম্বর সোমবার দুপুর পর্যন্ত। পুলিশ ও এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন রাতে বাড়ি ঘেরাও করে পরিচালিত পুলিশের এই অভিযানে সাবেক ইউপি সদস্য প্রয়াত বজল আহমদের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয় চারটি বিদেশি পিস্তল-রিভলবার, ৪২ রাউন্ড রাইফেলের গুলি, ১৯ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, শটগানের ১৬ রাউন্ড কার্তুজ, সাতটি খালি ম্যাগাজিন, একটি রকেট ফ্লেয়ার, দুটি রামদা এবং ৫০টি ইয়াবা ও ২৫০ গ্রাম গাঁজা। সন্ত্রাসীদের এই আস্তানায় পাওয়া যায় নগদ ৯৬ হাজার টাকা। এসময় পুলিশ আটক করে ওই বাড়ির মুহাম্মদ শওকতের ছেলে মো. সাকিব (২০) ও মুহাম্মদ সোবহানের ছেলে মো. শাহেদ (২৫)কে।
পুলিশ জানিয়েছে হাকিম হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রথম থেকে অভিযানের ধারাবাহিতায় আটক সন্ত্রাসীদের স্বাকারোক্তি নিয়ে সর্বশেষ অভিযানটি পরিচালিত হয় চৌধুরীহাট এলাকায়। গত রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত পরিচালিত এই অভিযান বাড়ির পিছনে থাকা একটি পুকুরের অস্ত্র ফেলে দেয়ার তথ্য পেয়ে ওই পুকুরের পানি ফেলতে লাগানো হয় বড় সেচ পাম্প। সেচ দেয়ার পর প্লাষ্টিকের বস্তা মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয় থানা থেকে লুন্ঠিত একটি চাইনিজ রাইফেলসহ একটি সার্টারগান। পুলিশের ভাষ্যানুসারে পুকুর থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রে গুলি লোড করা অবস্থায় ছিল।
এলাকার জনসাধারণ সূত্রে জানা যায় হাকিম হত্যাকান্ডের নেপথ্যে ছিল বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন এলাকার বালুর মহালের নিয়ন্ত্রন ও এলাকায় প্রভাববিস্তার করা নিয়ে। সূত্র মতে হাকিম হঠাৎ রাজনীতিতে এসে প্রভাব বিস্তার করে বালুমহলের নিয়ন্ত্রক নেয়ার ঘটনায় স্বদলীয় একটি প্রতিপক্ষ ভালভাবে নিতে পাচ্ছিল না। এই নিয়ে তার বিরুদ্ধে ভিতরে ভিতরে চলছিল নানা ষড়যন্ত্র। তবে হাকিমের উপর বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতার ছায়া থাকায় কোনো ভাবে হাকিমের সাথে পেরে উঠা সম্ভব ছিল না ওই গোষ্ঠিটির।
তারা হাকিমের সাথে বাইর থেকে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখলেও ভিতরে ভিতরে চলছিল ক্ষোভের আগুন। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে হাকিমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে আসছিল হাকিমের প্রভাব পতিপত্তির কাছে পেরে উঠতে না পারা ওই গোষ্ঠিটি। সর্বশেষ এই পরিকল্পনাকারীরা ৩০ অক্টোবর মদুনাঘাটে হাকিমের গাড়ি আটকিয়ে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় হাকিমের পরিবার খুনের মামলা করে অজ্ঞাত খুনিদের আসামী করে। পুলিশ এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার পর প্রথমে গ্রেফতার করে রাউজানের সন্ত্রাসী খোকন ওরফে লেংড়া খোকনকে। তার দেয়া তথ্য মতে ২ নভেম্বর নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মো. মারুফকে। এই সন্ত্রাসীর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের অবস্থান নিশ্চিত হয় পুলিশ। পুলিশ জানতে পারে অস্ত্র সমূহ মো. সাকলাইনের হেফাজতে আছে। ৪ নভেম্বর রাতে হাটহাজারী থানার একটি বিশেষ টিম রাউজানের নোয়াপাড়ায় অভিযান চালিয়ে সাকলাইনকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় তার হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি একনলা বন্দুক, একটি এলজি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীদের সন্ত্রাসীদের দেয়া সব তথ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে সর্বশেষ অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডে জড়িত ছয় খুনিকে গ্রেফতারসহ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু।
প্রধান সম্পাদকঃ মীর আসলাম, সম্পাদক ও প্রকাশকঃ কামরুল ইসলাম বাবু, নির্বাহী সম্পাদকঃ মোঃ ওসমান গনি