চট্টগ্রাম অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের অশনি সংকেত

চট্টগ্রাম অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের অশনি সংকেতঃ ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা চট্টগ্রামকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মধ্যে গণ্য করছেন। ভূতাত্ত্বিক অবস্থান এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এই অঞ্চলের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে এবং প্রাণহানির সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কেন উচ্চ ঝুঁকিতে?

চট্টগ্রামের এই উচ্চ ঝুঁকির মূল কারণ এর ভূতাত্ত্বিক অবস্থান এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ:

  • টেকটনিক প্লেটের নৈকট্য: চট্টগ্রাম বাংলাদেশের তিনটি প্রধান সক্রিয় টেকটনিক প্লেট—বার্মিজ-ইন্ডিয়ান, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ান, এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার (ইউরেশিয়ান) প্লেটের অত্যন্ত নিকটবর্তী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রাম নগরীর ভূগর্ভেও একটি মাইনর টেকটনিক প্লেট সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে।

  • অস্বাভাবিক গতিশীলতা: এই প্লেটগুলো দীর্ঘদিন ধরে অস্বাভাবিক গতিশীল অবস্থায় আছে। এর ফলস্বরূপ, ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ২১২ বার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে, যা ভূমিকম্পের ঘনত্ব বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

  • অননুমোদিত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন: মাত্র ৬০ বর্গমাইলের এই নগরীতে নিয়ম-নীতি না মেনে গড়ে উঠেছে বিপুল সংখ্যক বহুতল ভবন, যা উচ্চ ঝুঁকির মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরো পড়ুনঃ ভূমিকম্পে মেট্রোরেলের দেয়াল ও ফ্লোরে ফাটল, খুলে পড়েছে টাইলসও

বিশেষজ্ঞদের মারাত্মক সতর্কতা

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর (চুয়েট) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন:

চট্টগ্রামের বহু ভবনের বয়স ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে, যার প্রায় ৭৫ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। দুঃখজনকভাবে, নতুন অনেক ভবনও ভূমিকম্প প্রতিরোধী নকশা ছাড়া নির্মাণ করা হচ্ছে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে।

নগরীর ভবনের পরিসংখ্যান

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নগরীর ঝুঁকিটি পরিসংখ্যানগতভাবে ব্যাপক:

ভবনের ধরন সংখ্যা
মোট বহুতল ভবন ৪ লাখ ১ হাজার ৭২১টি
৬ থেকে ১০ তলা ভবন ১৩ হাজার ৪৮০টি
১০ তলার বেশি ভবন ৪৮৪টি

কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে, এই বিপুল সংখ্যক ভবনের মধ্যে অনেকগুলোতেই জাতীয় বিল্ডিং কোড (National Building Code) মানা হয়নি।

আরো দেখুনঃ সকালের রেশ না কাটতেই সন্ধ্যায় আবারও ভূমিকম্প, জনমনে আতঙ্ক

উদ্ধার কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা

ঝুঁকি কেবল ভবন ধসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশেষজ্ঞ এবং সিডিএ উভয়েই উল্লেখ করেছেন:

  • উপকূলীয় পরিবেশ: চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় নির্মাণসামগ্রী দ্রুত ক্ষয়প্রবণ (Corrosive) হয়ে ওঠে, যা ভবনের কাঠামোকে দুর্বল করে।

  • সংকীর্ণ সড়ক: নগরীর অসংখ্য সংকীর্ণ সড়ক দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের সময় জরুরি উদ্ধার তৎপরতা এবং ত্রাণ সহায়তায় বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

এই সংমিশ্রিত কারণে, যদি একটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে, তবে তার প্রভাব হবে নজিরবিহীন ও ধ্বংসাত্মক

AL Sheraz

One thought on “চট্টগ্রাম অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের অশনি সংকেত

Comments are closed.