মীর আসলাম (রাউজান নিউজ)ঃ
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে একের পর এক ডলফিন ও মা মাছ মরে ভেসে উঠার ঘটনায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছে পরিবেশবাদি ও হালদা বিশেষজ্ঞগণ।
শুক্রবার ২৮ জুন সকালে নদীতে ভাসমান দুটি মরা কাতলা মাছ হালদা পাড়ের মানুষ ডাঙ্গায় উঠিয়েছে। শুক্রবার দুটিসহ গত এক সপ্তাহে মরে ভেসে উঠা মরা মাছের সংখ্যা চার, এসময় মরেছে একটি ডলফিনও। এর আগে গত ২২ ও ২৬ জুন দুটি বড় মরা কাতলা ও রুই মাছ ভেসে উঠেছিল উরকিরচরের বাকরআলী চৌধুরী ঘাট এলাকায়। দুটি মাছের মধ্যে একটি পঁচে যাওয়ায় মাটি চাপা দেয়া হলেও অপর মৃত মাছটি উঠিয়ে নিয়ে যায় নৌকার এক মাঝি। ২৬ জুন নদীর গড়দুয়ারা পয়ন্টে পাওয়া যায় মৃত একটি ডলফিন। মরে পঁচে যাওয়া ডলফিনটিও সেখানে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানায়।
শুক্রবার সকালে যেই দুটি মরা কাতলা মাছ পাওয়া গেছে সেগুলো ভেসে উঠেছিল হাটহাজারী এলাকার দিকে মাদার্শা কুমারখালী এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে মরে ভেসে উঠা সবকটি মাছের ওজন ১০ থেকে ১৫ কেজি। জানা যায় একটি মাছের পাখনায় বড়শির আঘাতের চিহ্ন ছিল।
হালদা বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণি বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া হালদায় মাছ ও ডলফিন মৃত্যুর এই ঘটনায় ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন হালদা নদীর জলজপ্রাণী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি বহু বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। নদীর জীববৈচিত্রের প্রতি হুমকি হয়ে থাকা নানা দুষণসহ অন্যান্য কারণ তুলে ধরে এগুলো বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়ে আসছি। কিন্তু এসব দাবি, অনুরোধ কর্তৃপক্ষ আমলে না নেয়ায় আজ হালদা পাড়ের মানুষকে মা মাছের মৃত্যু দেখতে হচ্ছে, বিপন্ন প্রাণির তালিকাভুক্ত এই নদীর আশ্রয়ে থাকা এই পর্যন্ত ৪১টি ডলফিনের মৃত্যু দেখতে হয়েছে। তিনি ডলফিন রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য বন্য ও জলজ প্রাণি সংরক্ষণ বিভাগকে দায়ি করে বলেন হালদা নিয়ে যাদের ধারণা নেই তাদেরকে বিশেষজ্ঞ সাজিয়ে কাজ করতে গিয়ে হালদায় আশ্রয়ে থাকা ডলফিন গুলোকে মৃত্যু দিকে ঠেলে দিচ্ছে। একই সাথে তিনি নদীর মা মাছ রক্ষায় নদীর পানিকে দুষণমুক্ত করতে না পারায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য বিভাগের ব্যর্থতাকেও দায়ি করেছেন।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম মাছ ও ডলফিন মৃত্যুর জন্য দায়ি করেছেন এই নদীর জীববৈচিত্র রক্ষায় যাদের উপর দায়িত্ব তাদেরকে। তিনি অভিযোগ করে বলেন কয়েক বছর থেকে পরিবেশবাদি,বিশেষজ্ঞদল হালদায় বিষাক্ত বর্জ্য নিয়ে বার বার সর্তক করে বর্জ্যরে উৎস চিহ্নীত করে দায়িদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্টরা কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো প্রতিদিন টনে টনে বিষাক্ত বর্জ্য নদীতে এসে পড়ার ফলশ্রুতি জলজ প্রাণি গুলো বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার দৃশ্য আমরা দেখে যাচ্ছি। হালদা বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদিগন সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন আমরা আর হালদার মাছ ও ডলফিনের মৃতু দেখতে চাই না। বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ নামকরণ করা এই বিশেষায়িত নদীর জীববৈচিত্র রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করুন।